বাংলা আর্টিকেল লিখার নিয়ম
বাংলায় আপনি যদি একটি ভালো আর্টিকেল লিখতে চান তাহলে আপনাকে কিছু বিষয়ের সাথে পরিচিত থাকতে হবে। প্রথমত, আপনি যে বিষয় নিয়ে আর্টিকেল লিখতে চান তা আপনাকে ভালোভাবে বুঝতে হবে, আপনাকে সৃজনশীল ও গোছান ভাবে তা পাঠকের সামনে তুলে ধরতে হবে। আপনি ব্লগ, ওয়েবসাইট, সংবাদপত্র যেখানেই আপনার লেখা প্রকাশ করুন না কেন আপনাকে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষন করাতে হবে এবং আপনি আপনার লেখায় পাঠককে কি বোঝাতে চাইছেন তা পরিস্কার করতে হবে।
চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক কি করে আমরা বাংলাতে একটি সফল আর্টিকেল লিখতে পারব।
বাংলা আর্টিকেল লিখার নিয়মঃ পোষ্ট সুচিপত্র
যে উদ্দেশ্য নিয়ে আপনি আর্টিকেল লিখছেন তা বোঝা
আপনি যদি একটি ভালো আর্টিকেল লিখতে চান তবে আপনাকে প্রথমেই জানতে হবে আর্টিকেলটি
আপনি কি জন্যে এবং কাকে উদ্দেশ্য করে লিখছেন। বিভিন্ন উদ্দেশ্যে একটা আর্টিকেল
লেখা যেতে পারে। উদাহরন স্বরুপঃ আপনি কাউকে শিক্ষীত করতে, কাউকে বিনোদন দিতে অথবা
কাউকে আপনার পক্ষে আনতে আর্টিকেল লিখতে পারেন।
আপনি কাদের উদ্দেশ্যে লিখছেন এটা জানা থাকলে আপনাকে আর্টিকেল লিখার সময় কি রকম
ভাষা ব্যবহার করতে হবে এবং আপনি কিভাবে আপনার পাঠকদের আকর্ষন ধরে রাখতে হয় তা
আপনি বুঝতে পারবেন। আপনার পাঠকরা বৈষয়িক বিষয়ে আগ্রহী হলে আপনার অবশ্যই
বাস্তবভিত্তিক, ব্যবহারিক জিনিস লিখতে হবে। অন্যদিকে পাঠকদের মাঝে আলোচনা বা
বিতর্ক সৃষ্টি করতে আপনি মতামত ভিত্তিক বা রাজনৌতিক নিবন্ধ লিখবেন।
এছাড়াও এটি আপনার লেখার বিষয়বস্তুকে সাজিয়ে নিতে সাহায্য করে। যেমন, আপনি যদি
তথ্য ভিত্তিক কোন আর্টিকেল লিখেন তাহলে আপনার দেওয়া তথ্যগুলো এবং তাদের ব্যাখ্যা
আপনাকে অবশ্যই যৌক্তিক ভাবে সাজিয়ে নিতে হবে। অন্যদিকে আপনি যদি কোন একটা
বিষয়ে আপনার পাঠকদের আপনার পক্ষে নিয়ে আসতে চান তাহলে আপনাকে সেইরকম ধরনের যুক্তি
ও প্রমান দিয়ে পাঠকদের প্রভাবিত করতে হবে।
আপনি যদি একটা পরিস্কার উদ্দেশ্য নিয়ে একটা আর্টিকেল লিখতে বসেন তাহলে আপনি আপনার
পাঠকদের যা বোঝাতে বা অনুভব করাতে চেয়েছেন তারা তা বুঝতে পারবে। এর ফলে তারা খুশি
হবে এবং আপনার আরো লেখা পড়তে চাইবে। এতে করে আপনি লেখক হিসেবেও উপকৃত
হবেন।
আর্টিকেলের বিষয় নিয়ে গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহ করা
গবেষনা ও তথ্য সংগ্রহ করা একটা ভালো আর্টিকেল লিখার অপরিহার্য অংশ। আপনাকে লিখা
শুরু করার আগেই আপনি যে বিষয় নিয়ে লিখবেন তার উপর আপনাকে সঠিক ও বিশ্বাসযোগ্য
তথ্য সংগ্রহ করা উচিৎ। এতে আপনার আর্টিকালটি শুধু তথ্যসমৃদ্ধ ই হবে না, বরং তা
বিশ্বাসযোগ্যও হবে।
গবেষনার প্রথম ধাপ হিসেবে আপনি যে বিষয় নিয়ে লিখতে চাচ্ছেন তার মূল পয়েন্টগুলোকে
প্রথমে আপনাকে চিহ্নিত করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে প্রয়োজনীয় তথ্য খোঁজার জন্য
বিভিন্ন নামকরা উৎস যেমন একাডেমিক জার্নাল, বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট অথবা কোন
বিশেষজ্ঞের মতামত এর সাহায্য নিতে হতে পারে।
এভাবে আর্টিকেল লেখার প্রয়োজনীয় তথ্য, উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়ে গেলে আপনার কাজ হবে
আপনি যে তথ্যগুলো সংগ্রহ করেছেন তার গুণগত মান নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে আপনাকে ভুল
এবং একপাক্ষিক উৎস থেকে সাবধান থাকতে হবে। একই তথ্য বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করা
এবং তাদেরকে একে অপরের সাথে তুলনা (cross checking) করার মাধ্যমে আপনি আপনার
তথ্যগুলো সঠিক কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারবেন।
এভাবে পাওয়া তথ্যগুলোকে সাজিয়ে নেওয়া গবেষনার আরেকটি গুরুত্বপুর্ন দিক। আপনাকে
এভাবে পাওয়া তথ্যগুলোকে এখন আপনার গবেষনার বিষয়ের সাথে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন ছোট
ছোট গ্রুপে ভাগ করে রাখতে হবে। এটা আপনাকে আপনার আর্টিকেলকে একটা নিয়মের মধ্যে
আনবে যা আপনার পাঠকদের জন্যে পড়তে সুবিধা হবে।
আর্টিকেল টিকে সবার বোঝার উপযোগী করে সাজানো
আপনার আর্টিকেলকে একটি পরিষ্কার কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসলে আপনার পাঠকরা আপনি
তাদেরকে কি বোঝাতে চাচ্ছেন তা সহজে অনুসরন করতে ও বুঝতে পারবে। কেননা, একটি
সুসংগঠিত নিবন্ধ পাঠককে কোন বিভ্রান্তি বা জটিলতা ছাড়াই এক আইডিয়া থেকে অন্য
আইডিয়াই নিয়ে যায়।
কাঠামো তৈরির প্রথম ধাপ হচ্ছে একটি শক্তিশালী ভূমিকা তৈরি করা।
ভূমিকাতে সংক্ষেপে আপনাকে আর্টিকেলের মূল বিষয় এবং এর উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করা উচিৎ
যাতে পাঠকরা আপনার আর্টিকেল নিয়ে একটা পরিস্কার ধারনা পায়।
এরপর, আপনার আর্টিকেল এর মূল অংশকে একাধিক অনুচ্ছেদে ভাগ করতে হবে। প্রতিটি
অনুচ্ছেদ একটি টপিক সেন্টেন্স (Topic Sentence) দিয়ে শুরু করা উচিৎ যা মূল
ধারনাটিকে উপস্থাপন করবে, তারপর সেই ধারনার সমর্থনে বিস্তারিত তথ্য থাকবে।
এইভাবে তৈরি করা কাঠামোটি যুক্তির ধারাবাহিকতা বজায় রাখে এবং এর প্রতিটি অংশ
আগের অংশের উপর ভিত্তি করে এগিয়ে চলে।
আর্টিকেলের অনুচ্ছেদগুলোর মধ্যে সংযোগ তৈরি করা আর্টিকেলটিকে সবার বোঝার
উপযোগী করে তোলার জন্য গুরত্বপুর্ন। আপনি সফল ভাবে অনুচ্ছেদগুলোকে সংযোগ
করতে পারলে পাঠকরা মসৃণ ভাবে এক আইডিয়া থেকে আরেক আইডিয়ায় যেতে পারবে। আপনি
"তাছাড়া", "তবে", "ফলস্বরুপ" ইত্যাদি শব্দ ব্যাবহার করে পাঠককে এক যুক্তি থেকে
অন্য যুক্তি এবং এক পয়েন্ট থেকে অন্য পয়েন্টে নিয়ে যেতে পারবেন।
সবশেষে, আপনার আর্টিকেলটি এমন একটি উপসংহার দিয়ে শেষ করা উচিৎ যা আর্টিকেলটির
প্রধান পয়েন্টগুলিকে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরে। একটি সুসংগঠিত উপসংহার আর্টিকেল কে
সঠিকভাবে গুটিয়ে দেয়।
আপনার লেখার ত্রুটি, বিচ্যুতি দূর করা
আপনি যখন একটি আর্টিকেল লিখা শেষ করবেন তখন আপনাকে একাধিকবার সংশোধন ও পরিমার্জন
করতে হবে। প্রথম খসড়া সম্পন্ন হবার পরে যদি আপনি একটু সময় নিয়ে লিখাকে পরিশীলিত
করেন তবে তা আপনার আর্টিকেলের স্পষ্টতা, সামঞ্জস্য এবং সামগ্রিক
কার্যকারিতা অনেকটাই বাড়িয়ে দিবে। এই ধাপে আপনার লক্ষ্য হবে লিখার প্রবাহ
উন্নত করা, ভুল সংশোধন করা, এবং আপনার ধারনাগুলো সবচেয়ে ভালোভাবে
উপস্থাপন করা।
আপনার আর্টিকেল এর সংশোধন ও পরিমার্জন করার প্রথম ধাপ হলো আর্টিকেলটির সামগ্রিক কাঠামোর দিকে নজর
দেওয়া। আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আপনার ভূমিকা পাঠকদের মনযোগ আকর্ষন করছে,
মূল অংশটি ধারাবাহিকভাবে আইডিয়া প্রকাশ করছে এবং উপসংহারটি সঠিক ভাবে সেই
আইডিগুলোকে গুটিয়ে নিচ্ছে।
এরপর আপনাকে আপনার আর্টীকেল এ ব্যবহৃত ভাষার স্পষ্টতা ও নির্ভুলতার উপর
মনোযোগ দিতে হবে। দীর্ঘ ও জটিল বাক্য এড়িয়ে চলুন, এর পরিবর্তে সংক্ষিপ্ত ও সরল
ভাষায় লিখার চেষ্টা করুন। অপ্রয়োজনীয় শব্দ ও বাক্যাংশ বাদ দিয়ে আপনাকে নিশ্চিত
করতে হবে যে আপনার প্রধান আইডিয়াগুলোর জন্য সরাসরি প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু রয়েছে।
ব্যাকরণ, বিরামচিহ্ন, এবং বানান এই তিনটি ছোট অথচ গুরত্বপুর্ন জিনিস কে মাথায়
রাখতে হবে। আপনি আপনার আর্টিকেল কে ভালোভাবে প্রুফ রিডিং করলে আপনার পাঠকরা
পড়ার সময় তাদের আকর্ষন অন্য দিকে চলে যাবে না। আপনি বিভিন্ন অনলাইন বানান ঠিক
করার ওয়েবসাইট (spell checkers) অথবা
শুদ্ধ বাংলা বানানের নিয়মগুলো
জেনে নিলে আপনার পক্ষে এসব ভুল ধরা সহজ হবে।
আপনার লেখার ত্রুটি, বিচ্যুতি দূর করার মাধ্যমে আপনি একটি অপরিশোধত খসড়াকে একটি
পরিস্কার এবং প্রভবশালী রচনায় পরিণত করতে পারেন।
আর্টিকেলকে SEO বান্ধব করা
আপনি যদি চান আপনার আর্টিকেল টিকে অনেক মানুয পড়ূক, আপনার আর্টিকেলটিকে গুগল
(Google), বিং (Bing) তাদের সার্চ ইঞ্জিনে প্রথম পেজেই দেখাক তাহলে আপনাকে
অবশ্যই SEO বান্ধব আর্টিকেল লিখতে হবে। এটা করার জন্যে আপনাকে আর্টিকেল টিকে লেখা
ও সম্পাদনা করার পর্যায়ে কিছু কৌশল প্রয়োগ করতে হবে।
এর প্রথম ধাপ হলো কীওয়ার্ড রিসার্চ করা। আপনাকে প্রথমে আপনার আর্টিকেলের বিষয়ের
সাথে সম্পর্কিত এমন কিছু শব্দ বা বাক্যাংশ খুজে বের করতে হবে যা দিয়ে মানুষ সার্চ
দেয়। এই কীওয়ার্ড গুলোকে আপনার শিরোনাম, উপশিরোনাম এবং বিষয়বস্তুতে স্বাভাবিকভাবে
অন্তর্ভুক্ত করলে সার্চ ইঞ্জিন আপনার আর্টিকেলের প্রাসঙ্গিকতা আরও ভালোভাবে বুঝতে
পারবে।
এরপর আপনাকে একটি আকর্ষণীয় মেটা টাইটেল এবং বিবরণ (ভূমিকা) লিখতে হবে। এই
উপাদানগুলো সার্চ ইঞ্জিনে লিঙ্কের নিচে প্রদর্শিত হয় এবং এটা পড়েই পাঠকরা
আপনার লিঙ্কে ক্লিক করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। একটি কীওয়ার্ড-সমৃদ্ধ এবং
আকর্ষণীয় মেটা শিরোনাম ও বিবরণ আপনার আর্টিকেলের লিঙ্কে ক্লিক করার হার বা
ক্লিক-থ্রু রেইট (CTR) উল্লেখযগ্যভাবে বাড়াতে পারে।
আপনার আর্টিকেলের কাঠামো SEO এর জন্যে গুরুত্বপুর্ণ। আপনার আর্টিকেল টিকে
উপশিরোনাম (H2, H3), বুলেট পয়েন্ট বা ক্রমিক তালিকা তৈরি করে সুস্পষ্ট
বিভাগে ভাগ করুন। এটি সার্চ ইঞ্জিনকে
আপনার আর্টিকেল কে সহজে স্ক্যান করতে এবং বুঝতে সাহায্য করে।
আরেকটি গুরুত্বপুর্ণ দিক হলো অভ্যন্তরীন এবং বাহ্যিক লিঙ্কিং। আপনার ওয়েবসাইটের
মধ্যে প্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তুতে লিংক দিন (অভ্যন্তরীণ লিঙ্কিং) যা পাঠকদের আরও বেশি
সময় ধরে আপনার আর্টিকেলে ধরে রাখবে এবং আপনার সাইটের বাহিরে বিশ্বাসযোগ্য সুত্রে
লিঙ্ক দিন (বাহ্যিক লিঙ্কিং) যা পাঠকদের কাছে আপনার আর্টিকেলের বিশ্বাসযোগ্যতা
বাড়িয়ে দিবে। এই দুইটা কাজ করলে সার্চ ইঞ্জিন বুঝতে পারবে আপনার আর্টিকেলটি
উন্নতমানের।
সবশেষে, আপনার আর্টিকেলের মধ্যে যদি ছবি অথবা অন্যান্য মাল্টিমিডিয়া থাকে তবে
তাদেরকে বর্ণনামুলক "অল্ট টেক্সট" (Alt text) যোগ করে অপ্টিমাইজ করুন এবং ফাইলের
আকার কমিয়ে পেজের গতি বাড়ান। মনে রাখবেন, সার্চ ইঞ্জিন ওয়েব পেজ লোডের গতি
এবং ব্যাবহারকারীদের অভিজ্ঞতাকে র্যাঙ্কিং ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচনা করে।
আর্টিকেলের মধ্যে আপনার ইমেজগুলো অপ্টিমাইজড হয় থাকলে আপনার আর্টিকেলের সামগ্রিক
SEO এর উন্নতি ঘটে।
এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে,
এখানে ক্লিক করুন
শেষ কথা
সবশেষে এটা বলা যায় যে একটি বাংলা আর্টিকেল লেখার জন্য সৃজনশীলতা, সংগঠন, এবং
আপনি যে বিষয় নিয়ে আর্টিকেল লিখতে চাচ্ছেন তার প্রতি আপনার মনযোগের সমন্বয় ঘটাতে
হবে। আপনার পাঠক গোষ্ঠীকে বোঝা, বিস্তারিত গবেষনা করা এবং আপনার বিষয়বস্তু
সঠিকভাবে গঠন করার মাধ্যমে আপনি একটি আকর্ষণীয় এবং তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল লিখতে
পারবেন। এই ধাপগুলো অনুসরন করলে আপনার আর্টিকেলের মূল বক্তব্য পাঠকরা
পরিস্কারভাবে বুঝতে পারবে এবং এটি তাদের মনে একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব
ফেলবে।
এছাড়াও, আপনার আর্টিকেলটি সংশোধন ও পরিমার্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি
ভালোভাবে সম্পাদিত ও যত্নসহকারে তৈরি করা আর্টিকেল শুধুমাত্র পাঠকদেরই আকৃষ্ট
করবে না, এটি লেখক হিসেবে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতাও বাড়িয়ে দিবে। চূড়ান্তভাবে,
বাংলা আর্টীকেল লেখার দক্ষতা অর্জন করতে হলে চর্চা, ধৌর্য এবং সবসময়ে শেখার মন
মানসিকতা থাকতে হবে।
আমার ব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url