বিবাহিত জীবনে শান্তি বজায় রাখার ১০ টি উপায়
বিবাহ মানুষের জীবনের একটি অন্যতম গভীর এবং অন্তরঙ্গ অভিজ্ঞতা যা ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড, দৃষ্টিভঙ্গি এবং ব্যাক্তিত্তের দুইজন মানুষের মাঝে বন্ধন সৃষ্টি করে। একটি শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে বিবাহিত জীবনে শান্তি বজায় রাখার কোন বিকল্প নেই।
বিবাহিত জীবনে শান্তি বজায় রাখার মানে এই নয় যে আপনি কোন মতভেদ, বিবাদকে এড়িয়ে যাবেন; এর মানে হচ্ছে আপনি আপনার বৈবাহিক জীবনে কেমন করে এই পার্থক্যগুলোকে ইতিবাচকভাবে মোকাবেলা করবেন এবং এমন একটি পরিবেশ তৈরি করবেন যেখানে উভয় অংশীদার নিজেদের মনের কথাগুলো নির্ভয়ে প্রকাশ করতে পারে। এই আর্টিকেলে বিবাহিত জীবনে শান্তি বজায় রাখার ১০ টি গুরুত্বপুর্ন উপায় আলোচনা করা হলো।
সুচিপত্রঃ বিবাহিত জীবনে শান্তি বজায় রাখার ১০ টি উপায়
কার্যকরী যোগাযোগ
কার্যকরী যোগাযোগ যে কোন সম্পর্কের, বিশেষ করে বিবাহিত জীবনে শান্তি বজায় রাখার
একটি ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে কাজ করে। বিবাহিত জীবনে কার্যকরী সম্পর্ক শুধু
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কথা বলার মাধ্যমেই সীমিত থাকে না। এর মধ্যে আরও রয়েছে
সক্রিয়ভাবে কথা শোনা, আবেগীয় সচেতনা এবং নিজেকে সৎভাবে প্রকাশ করার
ক্ষমতা।
সক্রিয়ভাবে কথা শোনাঃ আপনি যদি মনযোগ
দিয়ে, কোনরকম প্রতিউত্তর বা কথার মাঝখানে কথা না বলে আপনার সঙ্গির কথা শোনেন
তাহলে আপনি সক্রিয়ভাবে কথা শোনার গুন আয়ত্ত করেছেন এটা ধরে নেওয়া যায়।
স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ই যাতে বুঝতে পারে যে তাদের মতামত ও অনুভুতিকে গুরুত্ব
দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে সংসারের কোন বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি এড়ানোর জন্য কোন একটি বিষয়
সম্পর্কে স্পষ্টভাবে প্রশ্ন করা যেতে পারে।
নিজের প্রয়োজন স্পষ্টভাবে প্রকাশ করাঃ বিবাহিত জীবনে শান্তি বজায় রাখতে স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই একে অপরের চাহিদা
এবং প্রত্যাশাগুলো সোজা কথায় পরিস্কারভাবে তুলে ধরতে হবে। প্রত্যাশা পুরন না হওয়া
সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হবার অন্যতম প্রধান কারন হিসেবে বিবেচিত হয়। উভয়পক্ষকেই
একে অপরের কাছে তাদের চিন্তা ভাবনা এবং অনুভুতিগুলোকে সোজা কথায় বলার অভ্যাস গড়ে
তুলতে হবে।
অ-মৌখিক ইঙ্গিতঃ আপনি যখন আপনার
সঙ্গীর সাথে কথা বলবেন তখন আপানার দেহ ভঙ্গি, মুখের অভিব্যক্তি (facial
expressions), এবং গলার স্বরের ওঠানামা এসব কিছুই আপনার বক্তব্য কেমন করে আপানার
সঙ্গী গ্রহন করবে তার উপর প্রভাব ফেলবে। আপনি যদি আপনার সঙ্গীর সাথে কথা বলার সময়
এসব অ-মৌখিক ব্যপারগুলোর দিকে খেয়াল রাখেন, তাহলে আপনার সঙ্গী বুঝতে পারবে আপনি
সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তার সাথে কথা বলছেন। অর্থাৎ, আপনি তাকে ঠকাচ্ছেন না।
একে ওপরকে দোষারোপ না করাঃ আপনি যখন
আপনার সঙ্গীর সাথে কথা বলবেন তখন "তুমি সবসময়..." অথবা "তুমি কখনোই..." এই জাতীয়
শব্দগুলো এড়িয়ে চলা উচিৎ কারন এগুলো থেকে বৈবাহিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে
ঝগড়ার সুত্রপাত হতে পারে। এর বদলে "আমি মনে করি..." জাতীয় বাক্যাংশ দিয়ে কথা শুরু
করা উত্তম। এভাবে কথা শুরু করলে আপনার নিজের অনুভূতির উপর জোর দেওয়া হবে এবং
আপনার সঙ্গীকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকা হবে, যা বিবাহিত জীবনে ঝগড়া ঝাটির
সম্ভাবনাকে কমিয়ে দিবে।
সংঘাত গঠনমূলকভাবে পরিচালনা করা
অন্য যেকোন সম্পর্কের মতই বিবাহিত জীবনে সংঘাত একটি স্বাভাবিক অংশ। কিভাবে
দম্পত্তিরা তাদের মতবিরোধগুলো সামলান তা নির্ধারন করে তা সম্পর্কের বিকাশে সহায়ক
হবে নাকি অশান্তি সৃষ্টি করবে।
ছোট খাট বিষয় নিয়ে তর্ক না করাঃ বিবাহিত জীবনে শান্তি বজায় রাখার জন্য তুচ্ছ ব্যাপারগুলো এড়িয়ে চলা ভালো।
আপনার সঙ্গীর ছোট খাট যে বিষয়গুলো আপনাকে বিরক্ত করে তা যদি আপনি দেখেও না দেখার
ভান করতে শিখেন তাহলে আপনি সংসারের অনেক অপ্রয়োজনীয় ঝগড়া থেকে বেঁচে যাবেন। যদি
ঝগড়া করতেই হয় তাহলে প্রত্যেক অংশীদারকেই একবার ভেবে দেখা উচিৎ যে বিষয়টি নিয়ে
তর্ক বিতর্ক করবেন তা আসলেই গুরুত্বপুর্ন কি না।
সঠিক সময় এবং স্থান নির্বাচন করাঃ পৃথিবীতে সবকিছুর একটা নির্দিষ্ট সময় এবং স্থান রয়েছে। আপনি যদি আপনার
সঙ্গী অপ্রুস্তুত থাকা অবস্থায় অথবা ভুল জায়গায় তার সাথে তর্ক জুড়ে দেন তাহলে তা
শুধু আপনাদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়ে ছাড়া আর কোন উপকারে আসবে না। একটা শান্ত
পরিবেশে, ঠান্ডা মাথায় আপনাদের মধ্যেকার সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করুন।
মতের মিল খোঁজাঃ আপনার সঙ্গীর সাথে আপনার মতের মিল খোঁজা বিবাহিত জীবনে শান্তি বজায়
রাখতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে। স্বামী-স্ত্রী দুইজনেই একে অপরের মতামতকে
সম্মান জানালে তারা বুঝতে পারে পরিবারে তাদের কথার দাম আছে। এর ফলে একে অপরের
প্রতি তাদের জমে থাকা ক্ষোভ কমে আসে, এবং পরিবারে কোন সমস্যার উদ্ভব হলে তার
একসাথে বসে সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা করতে পারে।
মতের অমিল মেনে নেওয়াঃ বিবাহিত জীবনে
কখনো কখনো আপনি হাজার চেষ্টা করেও কোন একটা বিষয় নিয়ে আপনার সঙ্গীর সাথে একমত
হতে পারবেন না। এই অবস্থায় আপনি যদি তর্ক চালিয়ে যান তবে তা আপনার পরিবারে
দীর্ঘস্থায়ী অশান্তি ডেকে আনতে পারে। আপনি যদি আপনার সঙ্গীর প্রতি আপনার
ভালোবাসা এবং সম্মান বজায় রেখে তার মতামত মেনে নিতে পারেন তাহলে আপনার বিবাহিত
জীবনে শান্তি বজায় থাকবে।
পারস্পরিক শ্রদ্ধা
যেকোন সফল বিবাহিত জীবনের পেছনে সংসারে স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের প্রতি সম্মান ও
শ্রদ্ধাবোধ মৌলিক ভূমিকা পালন করে। এখানে সম্মান বলতে শুধু একে অপরের প্রতি
বিনয়ী হওয়া বোঝায় না; এটি স্বামী এবং স্ত্রী এই দুজনের যে নিজস্বতা আছে তা
স্বীকার করে নেওয়া এবং একে অপরকে সমান করে দেখাকেও বোঝানো হয়ে থাকে।
ভিন্নতাকে সম্মান করাঃ একটি পরিবারে
স্বামী-স্ত্রী দুইজনেই ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ থেকে আসার জন্য স্বাভাবিকভাবেই তাদের
মধ্যে সংস্কৃতিগত, ব্যাক্তিগত অভ্যাস, এবং রুচির পার্থক্য থাকবে। বিবাহিত জীবনে
শান্তিপুর্ন পরিবেশ বজায় রাখার জন্য এসব জিনিসকে মেনে নিতে হবে। আপনি যদি আপনার
সঙ্গীকে সে যেমন তাকে তেমনভাবে গ্রহন করতে পারলে তার নিজস্বতাকে সম্মান জানানো
হবে।
আঘাতমূলক কথা এড়ানোঃ রাগের মাথায় অনেক সময় আমরা অন্যকে আঘাত করার জন্য অনেক উলটাপালটা কথা বলে
ফেলি। ঝগড়া শেষ হয়ে গেলেও এসব কথার রেশ আপনার সঙ্গীর মনে থেকেই যায় যা
দীর্ঘমেয়াদে আপনার সম্পর্কের ক্ষতি করবে। তর্কের সময় একটু ভেবে চিন্তে কথা বললে
এসব ক্ষতি এড়ানো যায়।
ব্যাক্তিগত বিকাশে সাহায্য করাঃ বিবাহ
স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের ব্যাক্তিগত বিকাশ এবং বেড়ে ওঠাকে সয়াহতা করে। একটি আদর্শ
বৈবাহিক সম্পর্কে প্রত্যেক সঙ্গীকে একে অপরের উচ্চাকাঙ্ক্ষা, আগ্রহ এবং
ব্যাক্তিগত লক্ষ্যকে সমর্থন করা এবং উৎসাহ জানানো উচিৎ। স্বামী স্ত্রী একে অপরের
ব্যাক্তিগত বিকাশকে সহায়তা করলে তাদের সম্পর্ক মজবুত হবে এবং একে অপেরের উপর চেপে
রাখা রাগ কমে যাবে।
দয়া এবং সহানুভূতির চর্চা করা
আপনি যদি আপনার সঙ্গীকে বুঝতে চান তবে দয়া এবং সহমর্মিতা এই দুইটি জিনিসের কোন
বিকল্প নেই, বিশেষ করে সংসারে ঝগড়াঝাটির সময়ে। আপনার সঙ্গীর প্রতি সহমর্মি হওয়া
মানে তার দিক থেকে কোন পরিস্থিতি চিন্তা ভাবনা করা।
অনুভূতিগুলোকে স্বীকার করাঃ আপনি যদি
আপনার সঙ্গীর অনুভূতিগুলোকে পুরোপুরি বুঝতে নাও পারেন অথবা তার অনুভূতিগুলো আপনার
কাছে ঠিক মনে না হয়, তারপরও আপনার উচিৎ তার অনুভুতিগুলোকে এড়িয়ে না যাওয়া। আপনার
সঙ্গীর অনুভুতিগুলোকে স্বীকৃতি দিলে সে বুঝতে পারবে সংসারে তার দাম আছে এবং তাকে
বোঝার মত মানুষও আছে।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাঃ ছোট ছোট কৃতজ্ঞতার
প্রকাশ বিবাহিত জীবনে শান্তি বজায় রাখতে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করে। সংসারে
আপনার সঙ্গীর অবদানের জন্য, তা সে যত ছোটই হোক না কেন, প্রশংসা করলে তা আপনার
বিবাহিত জীবনের ভালো দিকগুলো ফুটিয়ে তুলে এবং তা স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার আবেগিয়
সম্পর্ককেও শক্তিশালী করে।
দোষ ত্রুটির ব্যপারে ধৈর্য্য ধরাঃ আমার কেউই নিখুঁত নয়, আমাদের সকলেরই কিছু না কিছু দোষ ত্রুটি রয়েছে।
বিবাহিত জীবনে শান্তি বজায় রাখার জন্য তাই আপনাকে আপনার সঙ্গীর কিছু কিছু দোষ
ত্রুটিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ। সম্ভব হলে তাকে ধৈর্য্য ধরে বুঝিয়ে
বলুন কেন তাকে তার স্বভাবের মন্দ দিকগুলো সংশোধন করতে হবে; একই সাথে আপনিও তার
কথা শুনে নিজেকে শুধরানোর চেষ্টা করুন।
একসাথে মানসম্পন্ন সময় কাটানো
একসাথে মানসম্পন্ন সময় কাটানো সঙ্গীদের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য
করে। এটি বিবাহিত জীবনের শুরুতে দম্পত্তিদের মধ্যে নিজেদের প্রতি যে টান ছিল তাকে
আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসে। দৈনন্দিন রুটিন ও দায়িত্ব থেকে দূরে সময় কাটানো
দম্পত্তিদের মনে করিয়ে দেয় কেন তারা একে অপরের প্রেমে পড়েছিল।
নিয়মিত বাইরে ঘুরতে যাওয়াঃ নিয়মিত বাইরে
ঘুরতে যাওয়া অথবা অন্যান্য কাজ একসাথে করার মাধ্যমে দম্পত্তিদের মধ্যে সম্পর্কের
নবায়ন ঘটে। দম্পত্তিরা একসাথে পার্কে হাটতে যেতে পারে, দুইজনে একসাথে কোন ছবি
দেখতে পারে, অথবা দুইজনে বাড়িয়ে একসাথে কোন কিছু রান্না করার মাধ্যমে তাদের
মধ্যকার ভালোবাসা গাঢ় করতে পারে।
শখ এবং কৌতূহল শেয়ার করাঃ আপনি আপনার
বিবাহিত জীবনে আপানার শখ ও কৌতূহলগুলো আপনার সঙ্গীর সাথে শেয়ার করলে তার সাথে
আপনার বণ্ডিং হবার একটা ভালো সুযোগ সৃষ্টি হয়। বাড়িতে বা ছাদে বাগান করা, একসাথে
হাঁটা অথবা দুইজনে মিলে একসাথে কিছু শেখা এসব হবির মাধ্যমে একসাথে কাজ করার যে
মজা পাওয়া যায় তা আপনাদের সাহচার্য বাড়িয়ে দেয়।
ছুটি এবং ভ্রমনঃ দৈনন্দিন জীবন ও দায়িত্ব থেকে কিছু সময় বিরতি নেওয়া সম্পর্ককে নতুনভাবে
উজ্জীবিত করতে সাহায্য করে। একটি ছোট ভ্রমন দম্পত্তিদের অল্প সময়ের জন্য হলেও
তাদের সংসারের দায়িত্বগুলো ভুলিয়ে দিয়ে একে অপরের প্রতি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে
সুযোগ দেয়।
সীমা নির্ধারন এবং স্বাধীনতা বজায় রাখা
বিবাহিত জীবনে শান্তি বজায় রাখার জন্য দম্পত্তিদের স্বাস্থ্যকর সীমা নির্ধারন কর
জরুরি। সীমারেখা প্রতিটি সঙ্গীকে তাদের নিজস্ব ব্যাক্তিস্ব বজায় রাখতে দেয়, একই
সাথে একে অন্যের প্রতি অনুগত থাকতে সাহায্য করে।
ব্যাক্তিগত স্থানকে সম্মান করাঃ প্রত্যেক
মানুষের জীবনে ব্যাক্তিগত কিছু সময় এবং স্থানের দরকার আছে। বিবাহিত জীবনে শান্তি
বজায় রাখার জন্যেও তা প্রযোজ্য। আপনি যদি আপনার সঙ্গীকে প্রয়োজনে কিছু সময় একা
থাকার অনুমতি দেন অথবা তাকে তার বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে দেন তবে তা বিবাহিত
জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যপারে গুরুরত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করবে।
বন্ধুত্ব এবং পারিবারিক সম্পর্ক বজায় রাখাঃ পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব বিবাহিত জীবনে পরিবারের বাইরেও দম্পত্তিদের
আলাদা একটা সাপোর্ট সিস্টেম গড়ে দেয়। এমন অনেক সময় আসে যখন স্বামী স্ত্রী নিজেদের
পরিবারের সমস্যা নিজেরা সমাধান করতে পারে না; এসব জায়গায় পারিবারিক বন্ধু ও
আত্মীয় স্বজনদের সাহায্য নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। সুতরাং বন্ধুত্ব ও পারিবারিক সম্পর্ক
বজায় রাখার মাধ্যমে বৈবাহিক সম্পর্কে একটা ভারসাম্য আসে যেটা স্বামী স্ত্রীদের
একে অপরের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হওয়া ঠেকায়।
ব্যক্তিগত আকাঙ্খাকে সমর্থন জানানোঃ সঙ্গিদের ব্যাক্তিগত বা পেশাগত লক্ষ্য এবং আকাঙ্খাগুলোকে সমর্থন করা উচিৎ।
যখন একজন ব্যাক্তি নিজের আকাঙ্খা পূরণের জন্য কাজ করেন, তখন তা বৈবাহিক জীবনে এক
ধরনের পরিপূর্ণতার অনুভূতি নিয়ে আসে যা সম্পর্ককে আরও সমৃদ্ধ করে।
আর্থিক সামঞ্জস্য বজায় রাখা
আর্থিক বিষয়গুলো বিবাহিত জীবনে শান্তি বজায় রাখার জন্য প্রায়ই বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই যদি তাদের আর্থিক বিষয়গুলো একে অপেরের সাথে খোলাখুলি ভাবে
আলোচনা করে, টাকা জমানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করে এবং তাদের আয়ের সাথে
সামঞ্জস্য রেখে বাজেট তৈরি করে তাহলে তারা সংসারে অর্থবিষয়ক চাপ থেকে মুক্তি পেতে
পারে।
স্বচ্ছতা এবং সততাঃ টাকা পয়সার ব্যাপারে স্বচ্ছতা সংসারে স্বামী স্ত্রীর মদ্ধ্যে ভুল
বোঝাবোঝি বন্ধ করে। প্রত্যেক অংশীদারকেই পরিবারের মাসিক বাজেট এবং দুজনে টাকা
জমিয়ে ভবিষ্যতে কি করতে চায় সেটা পরিস্কারভাবে বুঝতে হবে।
যৌথভাবে অর্থনৈতিক লক্ষ্য ঠিক করাঃ বিবাহিত জীবনে স্বামী স্ত্রী একসাথে মিলে ভবিষ্যতের জন্য
অর্থনৈতিক লক্ষ্য ঠিক করা তাদের মধ্যকার বাঁধনকে মজবুত করে। যৌথ অর্থনৈতিক লক্ষ্য
যেমন, বাড়ি বানানো বা অ্যাপার্ট্মেন্ট কেনার জন্য টাকা জমানো, ব্যাবসা করার জন্য
বিনিয়োগ করা অথবা সন্তানদের পড়ালেখার জন্য প্ল্যান করা এসব কিছুই দম্পত্তিদেরকে
বৈবাহিক জীবনকে একটা উদ্দেশ্য দান করে।
যৌথ দায়িত্বের সাথে স্বাধীনতা বজায় রাখাঃ বিবাহিত জীবনে শান্তি বজায় রাখতে গেলে ব্যাক্তিগত এবং যৌথ ব্যায়গুলোর মাঝে
ভারসাম্য রক্ষা করা দরকার। দম্পত্তিরা পরিবারের খরচ চালানোর জন্য যৌথভাবে দায়ী
থাকলেও , তাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব প্রয়োজন এবং শখ মেটানোর জন্য টাকা বরাদ্দ রাখা
উচিৎ। এতে করে উভয় পক্ষই পরিবারে নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে সবল বোধ করবে।
বিশ্বাস গঠন করা
যে কোন সম্পর্কের মূল ভিত্তিই হল বিশ্বাস। একবার যদি বিশ্বাস ভেঙ্গে যায় তবে তা
ফিরিয়ে আনা খুব কঠিন, একরকম অসম্ভবই বলা চলে। তাই বিবাহিত জীবনে শান্তি বজায়
রাখার জন্য স্বামী স্ত্রী উভয়কেই এক অপরের উপর বিশ্বাস ধরে রাখার কোন বিকল্প
নেই।
নির্ভরযোগ্য এবং দৃড় থাকাঃ বিবাহিত জীবনে আপনাকে সময়ের সাথে সাথে আপনার সঙ্গীর কাছে দৃড়ভাবে নিজেকে
নির্ভরযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। যখন প্রত্যেক অংশীদার মনে করে তারা একে অপরের উপর
নির্ভর করতে পারবে, তখন তা সংসারে শান্তি ও নিরাপত্তার পরিবেশ গড়ে তোলে।
প্রতিশ্রতি রক্ষা করাঃ প্রতিশ্রুতি রক্ষা, তা সে যত বড়ো বা ছোট হোক না কেন, আপনার সঙ্গীকে বোঝায়
যে আপনি আপনার কথার দাম রেখে তার ইচ্ছাকে সম্মান করছেন। আবার, আপনি যদি তাকে কথা
দিয়ে কথা না রাখেন তাহলে তা বিশ্বাসের ভিত্তিতে ফাটল ধরিয়ে দিয়ে আপনার সম্পর্ককে
ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
উন্মুক্ত এবং সৎ যোগাযোগকে উৎসাহিত করাঃ সততার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা সম্পর্ক একটা নিরাপদ পরিবেশকে উৎসাহিত করে।
বৈবাহিক সম্পর্কে প্রত্যেক অংশীদারই যেন তাদের মনের কথা এক অপরকে কোন রকম
জাজমেন্ট বা পাল্টা আঘাত ছাড়াই নির্দ্বধায় বলতে পারে।
ক্ষমা করা এবং ভুলে যাওয়া
বিবাহিত জীবনে স্বামী স্ত্রীরা যদি একে অপেরের উপর ঘৃনা বা রাগ পুষে রাখে তবে তা
সংসারে তিক্ততা সৃষ্টি করে যার ফলে বৈবাহিক জীবনে অশান্তির সৃষ্টি হয়। তাই ক্ষমা
করা এবং ভুলে যাওয়ার ক্ষমতা বিবাহিত জীবনে শান্তি বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য
ভূমিকা পালন করে।
মানব চরিত্রের ত্রুটি বোঝাঃ মানুষ মাত্রই
ভুল করে, এই সত্যটার মর্ম বুঝলে দম্পত্তিরা একে অপরের দোষ ত্রুটিকে সহনশীল চোখে
দেখতে শুরু করে। নিজের স্বভাবের ভুল ত্রুটি বুঝতে পারা অপরের ভুল ত্রুটিকে ক্ষমা
করতে সাহায্য করে।
আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়াঃ আপনি কোন ভুল
করে পরে অনুতপ্ত হয়ে আপনার সঙ্গীর কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইলে তা সংসারে ক্ষত
সারিয়ে তুলে এবং বিবাহিত জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। এর ফলে আপনার সঙ্গী আরও
বুঝতে পারে যে তার প্রতি আপনি সত্যিকারভাবেই দায়বদ্ধ আছেন এবং প্রয়োজনে আপনার
নিজেকে শোধরানোর ইচ্ছাও আছে। এটি পরিবারে একটা ক্ষমার পরিবেশ তৈরি করে।
সামনে এগিয়ে যাওয়াঃ বিবাহিত জীবনে ঝগড়া ঝাটি অথবা অন্য কোন সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে, সে
ব্যাপারটি ভুলে যাওয়া উত্তম। অতীতের ভুল ত্রটিগুলো বারবার উল্লেখ করলে তা
দম্পতিদের অতীত পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেত বাধা দেয় এবং একটি শান্তিপুর্ন
বৈবাহীক জীবন উপভোগ করাকে ব্যাহত করে।
আধ্যাত্মিক বা ব্যাক্তিগত উন্নতি একসঙ্গে করা
অনেক দম্পত্তি যৌথ আধ্যাত্মিক বা ব্যাক্তিগত বিকাশমূলক কার্যকলাপ থেকে বৈবাহিক
জীবনে শান্তি পান। ধর্ম, ধ্যান বা অন্যান্য ব্যাক্তিগত উন্নয়নের অনুশীলনের
মাধ্যমে একসঙ্গে বেড়ে ওঠা দম্পত্তিদের বন্ধনকে গভীর করতে পারে।
একসাথে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করাঃ আপনি ব্যক্তিগত জীবনে ধার্মিক হয়ে থাকলে এবং আপনার সঙ্গীও যদি আপনার
ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক বিশ্বাস মেনে চলে তাহলে আপনার উচিৎ হবে আপনার সঙ্গীকে সাথে
নিয়ে ধর্মকর্ম এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে একসাথে অংশগ্রহন করা। এতে করে আপনার
সঙ্গীর সাথে আপনার গুরুত্বপূর্ণ কথোপকথনের সুযোগ তৈরি হয় যা বৈবাহিক জীবনে আবেগগত
ঘনিষ্টতা বাড়ায়। এছাড়াও একসাথে ধর্মকর্ম পালন দম্পত্তিদের মনে সান্তনা এনে দেয়
এবং এটি তাদের অভিন্ন মূল্যবোধকে শক্তিশালী করে।
ব্যাক্তিগত উন্নয়নের কার্যক্রমে অংশগ্রহনঃ ধ্যান, কাউন্সেলিং বা সেলফ-হেল্প কর্মশালার মতো ব্যাক্তিগত উন্নয়নের
কার্যক্রমে অংশগ্রহন উভয় সঙ্গীর আবেগগত এবং মানসিক স্থিতিশীলতা উন্নত করতে পারে।
এই কাজগুলো দম্পত্তিদের মনে একটি অভিন্ন উদ্দেশ্যকে জাগিয়ে তোলে যা পরস্পরকে
গভীরভাবে বোঝা এবং একে অন্যকে সমর্থন জানাতে উৎসাহ যোগায়।
পরস্পরের বিশ্বাসকে উৎসাহিত করাঃ
বৈবাহিক জীবনে আপনি এবং আপনার সঙ্গী যদি ভিন্ন ভিন্ন জিনিসে বিশ্বাস করে থাকেন
তারপরও আপনার উচিৎ হবে তার বিশ্বাসকে সম্মান জানানো এবং তার আধ্যত্মিক যাত্রায়
তাকে সমর্থন করা। এর ফলে সংসারে এমন একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হবে যেখানে উভয়
সঙ্গীই তাদের বিশ্বাস বা মতামত মুক্তভাবে প্রকাশ করতে পারবে।
শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায়, বিবাহিত জীবনে শান্তি বজায় রাখতে হলে স্বামী স্ত্রী দুইজনকেই
অবিরত চেষ্টা, বোঝাপড়া, এবং একে অপরের প্রয়োজনের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার ইচ্ছা থাকতে
হবে। নিজেদের মাঝে খোলামেলা আলোচনা করা, একে অপরকে সম্মান জানানো এবং দুজনে মিলে
কিছু ভালো সময় কাটানোর মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সম্পর্কের শক্ত ভিত গড়ে তুলতে
পারবে।
বিবাহ তখনই সফল হয় যখন স্বামী স্ত্রী দুজনেই সংসারের ঝামেলাগুলো নিজেদের মধ্যে
শান্তভাবে আলাপ আলোচনা করে মিটিয়ে নেয়। ভালোবাসা, ধৈর্য, এবং পারস্পারিক সমর্থনের
মাধ্যমে এমন একটি সম্পর্ক তৈরি করা সম্ভব যা সময়ের পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।
আমার ব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url