শরীর চুলকানির কারন-শরীরে চুলকানি থেকে মুক্তির উপায়

 

চুলকানি আমাদের শরীরের একটি অতি সাধারন উপসর্গ যা আমাদের হালকা বিরক্তি থেকে শুরু করে অত্যন্ত হতাশার কারন হতে পারে। চুলকানি আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি একটি অংশ, যা আমাদের চামড়ার জন্য ক্ষতিকর এমন বস্তুকে আমাদের দেহ থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য তাড়া দেয়। 

শরীর-চুলকানির-কারন - শরীরে-চুলকানি-থেকে-মুক্তির-উপায়


কিন্তু ঘন ঘন চুলকানি আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপন করতে বাধা দেয়। সুতরাং আমাদের শরীরে কি কারনে ঘন ঘন চুলকানি হয় এবং তা থেকে মুক্তির উপায় জানা আমরা এই সমস্যাটিকে সহজেই ম্যানেজ করতে পারবো। 

সুচিপত্রঃ শরীর চুলকানির কারন-শরীরে চুলকানি থেকে মুক্তির উপায় 

শরীরে চুলকানোর কারন কি 

আমাদের ত্বকের নিচে মাকড়সার জালের মত প্রুরিসেপ্টরস্‌ নামের একপ্রকার স্নায়ুকোষের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে আছে যা চুলকানির মতো অনুভূতিগুলোকে আমাদের মস্তিস্কে পৌঁছিয়ে দেয়। এই রিসেপ্টরগুলো আমাদের ত্বকের উপর ঘটে যাওয়া নানা রকম ভৌত, রাসায়নিক, তাপগত অথবা বৈদ্যুতিক উদ্দীপনার মতো বিভিন্ন প্রকার উত্তেজনার প্রতি সাড়া দেয়। এগুলো সক্রিয় হয়ে উঠলে তারা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের আনমাইলিনেটেড C ফাইবারের মধ্য দিয়ে স্পাইনাল কর্ড  এবং সবশেষে আমাদের মস্তিকের সোমাটোসেন্সরি কর্টেক্সে সিগন্যাল পাঠায় যাকে আমাদের মস্তিস্ক চুলকানি বলে চিহ্নিত করে। 

চুলকানির জন্য দায়ী প্রধান রাসায়নিক উপাদান হচ্ছে হিস্টামিন; আমাদের দেহে ফুলে ওঠা বা অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশনের সময় শরীরের মাস্ট কোষগুলো থেকে এই উপাদান নির্গত হয়। হিস্টামিন ত্বকের রিসেপ্টরগুলোর সাথে যুক্ত হয় যার ফলে ধাপে ধাপে রক্তনালীর প্রশস্ততা বেড়ে যায়, আক্রান্ত এলাকা লালচে রঙ ধারন করে, এবং চুলকানি আরম্ভ হয়। এছাড়াও সাইটোকাইনস্‌, প্রোটিসেস, এবং নিউরোপেপটাইডস্‌ এর মতো উপাদানগুলোও আমাদের শরীরে বিভিন্ন প্রকার চুলকানি সৃষ্টি করে।   


সারা শরীর চুলকানির কারন কি 

সারা শরীরে চুলকানির কারনগুলোকে প্রধানত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো চামড়া জনিত, শারীরিক, অ্যালার্জি, ইনফেকশন, মানসিক এবং পরিবেশগত কারন। প্রতিটি কারনগুলোর আবার নিজস্ব উপসর্গ এবং ট্রিগার রয়েছে। 

চামড়া জনিত কারনগুলোঃ চামড়া জনিত কারনেই সাধারনত আমাদের সারা শরীরে চুলকানি হয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রধান কারনগুলো হলো শুস্ক চামড়া, একজিমা, সোরিয়াসিস এবং চাকা ওঠা। নিচে এই সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।

 শীতকালে শুস্ক চামড়ার (Xerosis) কারনে আমাদের সারা গায়ে চুলকানি হয়ে থাকে। এছাড়াও বৃদ্ধ লোকদের মাঝেও এর প্রার্দুভাব দেখা যায়। চামড়া থেকে আর্দ্রতা কমে গিয়ে শক্ত হয় যায় যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অস্বস্তিকর চুলকানির জন্ম দেয়। 

 একজিমা (Atopic Dermatitis) একটি দীর্ঘস্থায়ী চর্মরোগ যার ফলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে শুকনো চামড়া গুচ্ছ  গুচ্ছ ভাবে ফুলে উঠে চুলকাতে থাকে। এটি সাধারনত বংশগত কারনে হয়ে থাকে, এবং পরিবেশগত কারনগুলির দ্বারা প্রভাবিত হয়, যার ফলে এটি বারবার দেখা দিতে পারে। একজিমা নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য সঠিকভাবে ত্বকের যত্ন নিতে হয় এবং ত্বক ফুলে ওঠা ও চুলকানি ঠেকানোর জন্য ঔ ষ ধ থেতে হয়। 

সোরিয়াসিস (Psoriasis) একটি অটো ইমিউন রোগ যার ফলে চামড়ার কোষগুলো শরীরের বিভিন্ন স্থানে দ্রুত জমা হয়ে লাল, চুলকানি যুক্ত আঁশের মত আকার ধারন করে। এগুলোকে প্রায়ই মাথার ত্বক, কনুই, এবং হাঁটুতে পাওয়া যায়; এগুলো ব্যাথার কারনও হতে পারে। সোরিয়াসিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ হলেও ঔষধ এবং লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করে এর প্রাদুর্ভাব কমানো যায়। 

হাইভস (Urticaria) ত্বকে লালচে, ফুলে ওঠা দাগ হিসেবে দেখা যায় যা অত্যন্ত চুলকায়। এই দাগগুলো প্রায়ই অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া, মানসিক চাপ, পোকা মাকড়ের কামড় অথবা তাপ ও ঠান্ডার মতো পরিবেশগত কারনগুলোর জন্য সৃষ্টি হয়। যদিও এগুলো বেশিরভাগ সময়ে নিজে থেকেই সেরে যায়, তারপরও  দ্রুত নিরাময় পাওয়ার জন্য অ্যান্টি-হিস্টামিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যেতে পারে। 

সিস্টেমিক কারণগুলোঃ কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ কারনে সারা শরীরে চুলকানি হয়ে থাকে, যা গুরুতর শারীরিক সমস্যার উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয়। লিভার বা যকৃতের বিভিন্ন রোগ এর একটি উদাহরন হতে পারে যেখানে লিভার ঠিকভাবে কাজ না করার জন্য রক্তে পিত্ত রসের লবন জমা হতে থাকে যা সারা শরীরে প্রচন্ড চুলকানির জন্ম দেয়। এটি লিভার জনিত সমস্যা যেমন কোলেস্টেসিস (Cholestasis) এর প্রাথমিক লক্ষন হতে পারে। 

কিডনি রোগ, বিশেষ করে যাদের কিডনি প্রায় বিকল হয়ে গেছে, চুলকানির একটি সিস্টেমিক কারন হতে পারে। এই সকল রোগীর রক্তে ইউরেমিক টক্সিন জমা হয়ে ইউরেমিক প্রুরিটাস (Uremic Pruritus) নামের সারা শরীরে একটানা চুলকানি হতে পারে। এই উপসর্গটি রোগীকে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে বাধা দেয়, যার ফলে রোগীকে প্রায়ই ডায়ালাইসিস নিতে হয় বা ঔষধ খেতে হয়।  

থাইরয়েড জনিত সমস্যার কারনে ত্বকের পরিবর্তন হয়ে চুলকানি হতে পারে। হাইপারথাইরয়ডিজম (থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত হরমোন উৎপন্ন করে) এর কারনে অতিরিক্ত ঘাম হয় যা ত্বকে জ্বালার সৃষ্টি করতে পারে; অন্যদিকে হাইপোথাইরয়ডিজম (থাইরয়েড গ্রন্থি প্রয়োজনের তুলনায় কম হরমোন তৈরি করে) ত্বকে শুস্কতা বাড়িয়ে দিয়ে রাফ প্যাচ (rough patch) তৈরি করে যা সারা শরীরে চুলকানি বাড়ায়। থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা সঠিকভাবে রাখলে এই ত্বক সম্পর্কিত সমস্যা দূর করা সম্ভব। 

কিছু কিছু ক্যান্সার যেমন লিম্ফোমা বা লিউকেমিয়া শরীরে রোগ প্রতিরোধ সিস্টেমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ঘটিয়ে অথবা নির্দিষ্ট কিছু রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণের মাধ্যমে চুলকানির জন্ম দেয়। এই ধরনের চুলকানি শরীরের নির্দিষ্ট কোন স্থানে অথবা সারা শরীরেই হতে পারে; মাঝে মাঝে এর সাথে জ্বর এবং ওজন কমে যাওয়ার মত উপসর্গও দেখা দিতে পারে। ক্যান্সার জনিত চুলকানি সারাতে মূল রোগ এবং চুলকানি উভয়ের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসা প্রয়োজন। 

ইনফেকশন জনিত কারনগুলোঃ ইনফেকশনের ধরন এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবীদের দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমন প্রায়ই শরীরের নির্দিষ্ট কোন জায়গায় অথবা সারা শরীরেই চুলকানির কারন হতে পারে। অ্যাথলিটস্‌ ফুট (Athlete's foot) এবং দাদ (Ringworm) এর মতো ছত্রাকজনিত সংক্রমনগুলো গরম, আর্দ্র পরিবেশে বেড়ে ওঠে এবং এরা চামড়াতে লাল, চুল্কানিযুক্ত এবং মাঝে মাঝে আঁশযুক্ত প্যাচ তৈরি করে। 

সেলুলাইটিস (Cellulitis) , ইম্পেটিগোর (Impetigo) মত ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমনের কারনেও চামড়া ফুলে উঠে চুলকানি শুরু হয়। চামড়ার কাটা জায়গা দিয়ে ব্যাকটেরিয়া ঢুকে সংক্রমন শুরু করে যার ফলে আক্রান্ত স্থানটি লাল হয়ে ফুলে যায়, একে সেলুলাইটিস বলা হয়। অন্যদিকে ইম্পেটিগো হচ্ছে অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমন যার ফলে শিশুদের চামড়ায় চুলকানিযুক্ত ফুসকুড়ি হয় যা ফেটে গিয়ে ক্রাস্ট তৈরি করে। 

সারা শরীরে চুলকানির জন্য পরজীবী জনিত সৃষ্ট রোগ যেমন খোস-পাঁচড়া এবং উকুন অন্যতম উৎস হিসেবে কাজ করে। মাইট নামের খালি চোখে দেখা যায় না এমন একজাতের পোকা আমাদের চামড়ায় নিচে গর্ত করে বসবাস এবং বংশবৃদ্ধি করতে থাকে যার ফলে সারা শরীরে চুলকানি হয় এবং লাল ফুসকুড়ি গজায়; একে খোস-পাঁচড়া বলা হয়। আবার, উকুন মাথার ত্বকের রক্ত খাওয়ার ফলে, উকুনের সংক্রমন হলে সবসময় মাথা চুলকাতে থাকে। 

মনস্তাত্ত্বিক কারনগুলোঃ বিভিন্ন মানসিক রোগ যেমন মানসিক চাপ, উদ্বেগ, অথবা অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিস অর্ডার (বারবার একই কাজ করার প্রবণতা) চুলকানিকে বাড়িয়ে দিতে এমনকি সরাসরি সারা শরীরে চুলকানোর প্রধান কারন হতে পারে। এই ধরনের চুলকানির স্পষ্ট শারীরিক কারন না থাকলেও এটি সাধারনত আবেগ গত এবং মানসিক চাপ থেকে উৎপন্ন হয়ে থাকে।

এই ধরনের চুলকানি নেতিবাচক চিন্তা বা তিব্র উত্তেজনার সময় আরও খারাপ হতে পারে, যা একধরনের দুষ্টচক্র তৈরি করে। এই চুলকানির চিকিৎসার জন্য মূল মানসিক সমস্যার মোকাবেলা এবং চুলকানি উপশমের কৌশল, এই দুটি জিনিসের সমন্বয় করতে হয়। 

পরিবেশগত কারনগুলোঃ দূষণ, কড়া সাবান, বা গায়ে অতিরিক্ত সুর্যের আলো লাগার মত ক্ষতিকর জিনিসগুলো ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং চুলকানির কারন হতে পারে। এই পরিবেশগত কারনগুলো আমাদের ত্বকের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষামূলক স্তরের ক্ষতি করে, যার ফলে আমাদের ত্বক অল্পতেই ফুলে যায় এবং সারা শরীরে চুলকানি হয়। 

একইভাবে, পোকামাকড়ের কামড় এবং হুল ফোটানোর ফলে শরীরের আক্রান্ত স্থান লাল হয়ে ফুলে ওঠে, এর সাথে প্রচন্ড চুলকানিও হতে পারে। ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে এমন জিনিসগুলোকে এড়িয়ে চলা, কীটনাশক ব্যাবহার করা এবং দিনের বেলায় বাহিরে বের হওয়ার সময়ে হাতে মুখে সানস্ক্রিন লাগানো পরিবেশগত কারনে চুলকানি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।  

শরীর-চুলকানির-কারন - শরীরে-চুলকানি-থেকে-মুক্তির-উপায়



এলার্জি জনিত চুলকানি থেকে মুক্তির উপায়

এলার্জি জনিত চুলকানি আমাদের অনেকের জীবনেরই এক অত্যন্ত অস্বস্তিকর একটি অভিজ্ঞতা যা আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনকে ব্যাহত করে। আমাদের রোগ প্রতিরোধ সিস্টেম যখন আমাদের শরীরে বাহ্যিক কোন কিছুর (যেমন ফুলের পরাগরেনু,খাবার, বা পশুর লোম) উপস্থিতি টের পেয়ে তাকে শরীরের জন্যে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে তখন রক্তে হিস্টামিন নামের একজাতীয় পদার্থ নিঃসরণ করে যা সারা শরীরে চুলকানি ঘটায়। এলার্জি জনিত চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে হলে তাই আমাদেরকে কোন কোন জিনিস আমাদের শরীরে এলার্জির সৃষ্টি করে তা আগে জানতে হবে, আমাদেরকে এলার্জি প্রতিরোধ করার উপায়গুলো গ্রহন করতে হবে, এবং এলার্জির উপসর্গগুলো কার্যকরভাবে কিভাবে ম্যানেজ করতে হয় তা জানতে হবে।

এলার্জি জনিত চুলকানি থেকে মুক্তি পাবার প্রথম ধাপ হল এলার্জেন (যে জিনিসগুলো আমাদের দেহে এলার্জি ঘটায়) চিহিত করা এবং দৈনন্দিন জীবনে তা এড়িয়ে চলতে শেখা। এলার্জি টেস্টিং আমাদেরকে ধূলিকনা, মোল্ড বা নির্দিষ্ট কোন খাবার এর মতো এলার্জেনকে চিনতে সাহায্য করে। একবার এই উপাদানগুলো চেনা হয়ে গেলে বাড়িতে একটি পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রেখে, এলার্জেন মুক্ত বিছানা ব্যাবহার করে আমরা ঐসকল এলার্জি সৃষ্টিকারি উপাদানগুলো থেকে মুক্ত থাকতে পারি। 

এলার্জি জনিত চুলকানি কমানোর জন্য ত্বকের সঠিক যত্ন নেওয়ার কোন বিকল্প নেই। যেসব ময়েশ্চারাইজার বা লোশোনের মধ্যে সম্ভাব্য এলার্জি ঘটাবার উপাদানগুলো সবচেয়ে কম রয়েছে, সেগুলো নিয়মিতভাবে মেখে ত্বককে হাইড্রেটেড রাখলে ত্বক শক্ত হয় যার ফলে অল্পতেই এলার্জি হবার আপদ থেকে বেঁচে যাওয়া যায়। এই জন্য মৃদু রাসায়নিকযুক্ত এবং গদ্ধহীন প্রোডাক্ট বেছে নেওয়া উচিৎ; অন্যথায় এগুলো ত্বকে জালাপোড়ন ঘটিয়ে চুলকানি বাড়িয়ে দিতে পারে। 

এলার্জি জনিত চুলকানি উপশম করার জন্য ঔষধ খাওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিহিস্টামিন, যেগুলো ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কিনতে পাওয়া যায়, শরীরে হিস্টমিন তৈরি করতে বাধা দেয়ার মাধ্যমে চুলকানি দূর করে। আরও গুরুতর অবস্থার জন্য, চিকিৎসকরা রোগীকে কর্টিকো-স্টেরয়েডস্‌ (Corticosteroids) অথবা ইমিউনোথেরাপি নিতে বলতে পারেন। 

জীবন যাত্রার ধরন পরিবর্তন করেও এলার্জি জনিত চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। বাড়িতে এয়ার পিউরিফাইয়ার ব্যাবহার করে; কাপড় চোপড়, বিছানার চাদর, ব্যাবহার করা তোয়ালে নিয়মিত কাচার মাধ্যমে এবং বাতাসে ধুলা বালি ও দূষণ বেড়ে গেলে বাহিরে যাওয়া কমিয়ে দেবার মাধ্যমে এলার্জি জনিত চুলকানি কমানো যায়। নিয়মিত পানি পান করা এবং সুষম খাবার খাওয়া শুধু ত্বকের স্বাস্থ্যেরই উন্নতি ঘটায় না, এটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়।  


ত্বকের চুলকানি থেকে মুক্তির উপায়- OTC মেডিকেশন 

ত্বকের চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বাজারে বেশ কিছু সহজলভ্য OTC (Over The Counter, যে ঔষধ ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কিনা যায়) ঔষধ পাওয়া যায়। ডাইফেনহাইড্রামিন (Diphendydramine) এর মতো মুখে খাওয়ার অ্যান্টি-হিস্টামিনগুলো শরীরে হিস্টামিনের প্রভাব দূর করে, যা তাদেরকে এলার্জি জনিত চুলকানি থেকে বাঁচার জন্য কার্যকরি করে তোলে। এই ঔষধগুলো দেহের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারনে হওয়া চুলকানি বন্ধ করার জন্যও কার্যকর, এবং চুলকানির জন্য ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে ঘুমাতেও সাহায্য করে। 

হাইড্রোকর্টিজন ক্রিমের মতো হালকা টপিকাল স্টেরয়েডগুলো শরীরের নির্দিষ্ট জায়গায় ফুলে ওঠা এবং চুলকানি বন্ধ করার জন্য বেশ ভালো ঔষুধ। এই ক্রিমগুলো একজিমা, পোকামাকড়ের কামড়ের ফলে চুলকানি, এবং সংস্পর্শজনিত ডার্মাটাইটিস প্রতিরোধে ভালো কাজ করে। নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী ব্যাবহার করলে এটি ত্বকের জ্বালাভাব কমায়, তবে দীর্ঘমেয়াদী ব্যাবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। 

পোকামাকড়ের কামড় এবং বিশেষ করে চিকেন পক্স জনিত কারনে সারা শরীরে চুলকানির উপশমের জন্য ক্যালামাইন (Calamine) লোশন একটি অন্যতম জনপ্রিয় OTC মেডিকেশন হিসেবে গন্য হয়ে আসছে। এটি ত্বকে একটি আরামদায়ক শীতল অনুভূতি সৃষ্টি করে যা অস্বস্তিকর অনুভূতি এবং ত্বকের লালচভাবকে কমিয়ে আনে। এই পন্যটি শিশুদের এবং বিশেষ করে যারা হালকা ত্বকের জ্বালা কমানোর  জন্য একটি কোমল সমাধান চান তাদের জন্য উপকারী হবে। 

মেন্থল এবং কর্পুর ভিত্তিক পণ্যগুলো ত্বকে শীতল অনুভূতি সৃষ্টি করে চুলকানি থেকে সাময়িক সময়ের জন্য আরাম দেয়। এই অনুভূতি চুলকানি থেকে রোগীর মনোযোগ সরিয়ে দিয়ে রোগীকে তাৎক্ষণিক আরাম দেয়। এই পণ্যগুলো শুস্ক ত্বক বা ছোটোখাট জ্বালার কারনে হওয়া চুলকানি সারাতে বিশেষভাবে কার্যকর। 


ত্বকের চুলকানি থেকে মুক্তির উপায়-প্রেসক্রিপশন মেডিকেশন  

  তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী চুলকানির ক্ষেত্রে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে প্রেসক্রিপশন ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে। একজিমা এবং সিরোসিস এর মতো ত্বক ফুলে উঠা চুলকানি প্রশমন করতে সাধারনত কর্টিকো স্টেরয়েড প্রেস্ক্রাইব করা হয় যা ট্যাবলেট আকারে খাওয়া যায়, মলমের মত লাগানো যায়, আবার দেহে ইঞ্জেকশন এর মাধ্যমেও প্রয়োগ করা যায়। এই ওষুধগুলো ত্বক ফুলে ওঠা এবং চুলকানি কমানোর জন্য ভালো কাজ করে; তবে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এড়ানোর জন্য এসব ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ মত সাবধানে খাওয়া উচিৎ। 

যেসব অটো-ইমিউন জনিত চুলকানি প্রচলিত চিকিৎসায় সারে না সেসব রোগীকে সাইক্লোসপোরিন (Cyclosporine) এর মতো ইমিউনো-সাপ্রেসান্টস্‌ প্রেসক্রাইব করা হয়। এই ওষুধগুলো অতি সক্রিয় ইমিউন প্রতিক্রিয়া দমন করে, যা সোরিয়াসিস বা অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিসের (Atopic Dermatitis) মতো অবস্থার জন্য দায়ী। ত্বকের চুলকানি ঠেকানোর জন্য এসব ওষুধ কার্যকর হলেও, ইনফেকশনের ঝুঁকি ও অন্যান্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার জন্য এগুলো নিবিড় চিকিৎসা তত্ত্বাবধানে নিতে হয়। 

বিষন্নতা প্রতিরোধি ওষুধগুলো (Antidepressants) মানসিক রোগের কারনে হওয়া দীর্ঘস্থায়ী চুলকানি সারাতে সাহায্য করতে পারে। এই ওষুধগুলো আমাদের মস্তিস্কের যে অংশ চুলকানির অনুভুতিকে প্রসেস করে তাকে প্রভাবিত করে, যার ফলে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের কারনে যাদের চুলকানি বেড়ে যায় তাদেরকে স্বস্তি এনে দেয়। 

যেসব ইনফেকশন শরীরে চুলকানি ঘটায় তা প্রতিরোধ করার জন্য অ্যান্টি-বায়োটিক অথবা অ্যান্টি- ফাঙ্গাল খাওয়া যেতে পারে। সেলুলাইটিস এর মতো ব্যাকটেরিয়া জনিত ইনফেকশন এবং দাদের মত ফাঙ্গাস জনিত রোগ শরীরে প্রচন্ড চুলকানি সৃষ্টি করে যা ঔষধ খেয়ে ভালো করা যায়। সঠিক ভাবে রোগ নির্নয় করা এবং যে অনুযায়ী ওষধ খাওয়ার ফলে শরীরে যে কারনে চুলকানি হচ্ছে তাকে সরাসরি চিহ্নিত করা হয় যার ফলে বারবার একই রোগের পুনরাবৃত্তি ঘটে না। 

শরীর-চুলকানির-কারন - শরীরে-চুলকানি-থেকে-মুক্তির-উপায়



শরীরে চুলকানি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় 

শরীরে চুলকানি আমাদের জীবনে একটি অত্যন্ত অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা হত পারে। শুধু তাই না এটি আমাদের স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে বাধা দেয়। নিচে চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু ঘরোয়া  উপায় আলোচনা করা হল।

  • এক-দুই কাপ ওটমিল হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে গোসল করুন। এরপর পনেরো থেকে বিশ মিনিট ভিজে থাকুন। এটি আপনার ত্বকের চুলকানি জনিত জ্বালাভাব কমাতে সাহায্য করবে।

  • একটি ঠান্ডা ভেজা কাপড় বা একটি তোয়ালে দিয়ে মোড়ানো বরফের প্যাক ত্বকের যে জায়গায় চুলকাচ্ছে তার উপর দশ-পনেরো মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এটি আক্রান্ত স্থানকে অবশ করে দেয় এবং চুলকানি ও ফুলে ওঠা কমিয়ে দেয়। 

  • তাজা অ্যালোভেরা জেল সরাসরি চুলকানির জায়গায় লাগান। এর প্রদাহবিরোধি গুন ত্বককে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।

  • এক ভাগ বেকিং সোডা তিন ভাগ পানির সাথে মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করুন। এটি চুলকানির জায়গায় লাগিয়ে দশ-পনেরো মিনিট রেখে দিন, তারপর ধুয়ে ফেলুন। 

  • সমপরিমান আপেল সাইডার ভিনেগার এবং পানি মিশিয়ে তুলো দিয়ে চুলকানির জায়গায় লাগান। তবে এটি ক্ষতস্থান বা ফেটে যাওয়া চামড়াতে লাগাবেন না। 

  • শুস্ক এবং চুলকানিযুক্ত ত্বককে আর্দ্র রাখার জন্য বিশুদ্ধ নারিকেল তেল ব্যাবহার করুন। গোসল করার পরে অথবা ঘুমাতে যাবার আগে ত্বকে হালকা করে মাখিয়ে নিন। 

  • চুলকানির জায়গায় কাঁচা মধু লাগান। মধুর মধ্যে ব্যাকটেরিয়া নাশক এবং ত্বককে শান্ত করার উপাদান রয়েছে। পনের থেকে বিশ মিনিট পরে তা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। 

  • ঠান্ডা শশার টুকরো চুলকানির জায়গায় রাখুন। এর শীতল অনুভুতি আপনার ত্বককে শান্ত করে দিবে। 

  • কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে চুলকানির জায়গায় লাগান। এটি পোকামাকড়ের কামড় অথবা ত্বকে ছত্রাক সংক্রমনের কারনে হওয়া চুলকানি প্রশমন করতে খুব ভালো কাজ করে। 

যদি চুলকানি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা বাড়তে থাকে, তবে আপানকে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ কারন এটি শরীরের কোন অন্তর্নিহিত সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। 


শেষ কথা

সবশেষে বলা যায়, শরীরে চুলকানি একটা সাধারন অবস্থা যা নানা রকম কারন যেমন অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া, ত্বকের সংক্রমন এবং দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক অসুস্থতা ইত্যাদির কারনে হয়ে থাকে। শরীরে চুলকানির সঠিক কারনগুলো বের করা শরীরে চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অপরিহার্য।

শরীরে চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ত্বকের সঠিক যত্ন নেওয়া, প্রয়োজনে অ্যান্টি-হিস্টামিন গ্রহন করা, এবং স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা কার্যকর উপায় হতে পারে। প্রতিরোধ মূলক ব্যাবস্থা এবং যথাযথ চিকিৎসার সমন্বয় করে, একজন ভুক্তভোগী মানুষ চুলকানি নিয়ন্ত্রণ করে তাদের সামগ্রিক জীবনমান উন্নত করতে পারে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমার ব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url